🌎কৃষি

কাঁকরোল চাষের ক্ষেত্রে আপনাকে যেসকল পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে হবে তা হলোঃ

১. মাটি নির্বাচনঃ
দোঁআশ থেকে এটেল দো-আঁশ মাটি কাঁকরোল চাষের জন্য উত্তম। তবে জৈব সার যোগ করে অন্যান্য মাটিতে কাঁকরোল চাষ করা যায়।

২. জমি নির্বাচনঃ
– মাঝারি উঁচু ও উচু জমি কাঁকরোল চাষের জন্য উত্তম।
– সুনিষ্কাশিত ও বন্যানমুক্ত জমিতে কাঁকরোল চাষ করা যায়। কাঁকরোল কিন্তু জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না।

৩. জাতঃ
কাঁকরোলের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। যেমন- আসামী, মণিপুরী, মুকন্দপুরী মধুপুরী ইত্যাদি।

৪. জমি তৈরীঃ
ক) জমি ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে তৈরী করতে হবে।

খ) জমির উপরিভাগ সমান ও আগাছা দমন করতে হবে।

গ) এরপর চাষকৃত জমিতে প্রয়োজনীয় মাপের বেড তৈরী করতে হবে।

৫. উপযুক্ত সময়ঃ
কাঁকরোলের বীজ বপন বা মোথা রোপণের উত্তম সময় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন মাস।

৬. সারের পরিমাণ (প্রতি হেক্টরে):

গোবর  — ৩-৫ টন
ইউরিয়া — ১২৫-১৫০ কেজি
টিএসপি — ১০০-১২৫ কেজি
এসওপি/এমপি — ১০০-১২৫ কেজি
জিপসাম — ৮০-১০০ কেজি

(মাটি পরীক্ষা করে সার সুপারিশ করা উত্তম)

৭. সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
ক) গোবর সার জমির তৈরির সময় ছিটিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

খ) টিএসপি, এসওপি, জিপসাম চারা লাগানোর ১৫ দিন আগে আকার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

গ) ইউরিয়া সার সমান দুভাগ করে মোথা গজানোর পর যথাক্রমে ১৫ ও ৩০দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

ঘ) এসওপি প্রয়োগ করলে এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে না।

ঙ) মাটি অধিক অম্লীয় হলে হেক্টরপ্রতি ৮০-১০০ কেজি ডলোচুন শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

৮. বীজ/মোথা বপনঃ
ক)  কাঁকরোল চাষের জন্য মোথা রোপণ করতে হবে। ২ মিটার দূরত্বে সারিতে ও ব্যবধানে ৫-৬ সেমি গভীরে মোথ রোপণ করে খড়কুটা দ্ধারা ঢেকে দিতে হবে।

খ) রোপণের জন্য নির্বাচিত মোথার ৫% পুরুষ গাছের মোথা হতে হবে।

গ) কেননা কাঁকরোলের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে জন্মেই পরাগায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্ত্রী গাছের পাশাপাশি আনুপাতিক হারে পুরুষ গাছ ধাকা দরকার।

৯. পরিচর্যাঃ
– মোথা গজানোর পর আগাছা জন্মালে তা দমন করতে হবে।
– নালার সাহায্যে পানির সেচ দিতে হবে।
– প্রতিদিন ভোরবেলা স্ত্রী ফুলে কৃত্রিম পরাগায়ন করতে পারলে ভালো হবে।
– কাঁকরোলের গাছ ১০-১৫ সেমি লম্বা হলে গাছের গোড়ায় ১ টি করে কাঠি পুঁতে দিতে হবে।
– গাছ ৫০ সেমি লম্বা হলে মাচা করে দিতে হবে।

১০. রোগ দমনঃ
কাঁকরোলের যে সকল রোগ দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- চারার ঢলে পড়া, পাউডারী মিলডিউ, মোজাইক। প্রথম ২টি ছত্রাকজনিত রোগ এবং শেষোক্তটি ভাইরাস জনিত রোগ।

১১.  চারার ঢলে পড়া রোগঃ
ক) এ রোগের আক্রমণে কচি গাছের গোড়া পঁচে যায়।

খ) চারা ঢলে পড়ে ও মার যায়।

১২. প্রতিকারঃ
– পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
– রোগমুক্ত মোথা লাগাতে হবে।
– আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।

১৩. পাউডারী মিলডিউ রোগঃ
পাতার উপরে সাদা সাদা ধূসর পাউডারী দেখা যায় এবং পাতা মরে যায়।

১৪. প্রতিকারঃ
ক) রোগমুক্ত মোথা রোপণ করতে হবে।
খ) রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে থায়োভিট বা মাইক্রোথিয়ন বা সালফোটক্স বা অন্যকোন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

১৫. ফসল সংগ্রহঃ
– মধ্য জুলাই হতে মধ্য সেপ্টেম্বর মাস কাঁকরোল সংগ্রহের উত্তম সময়।
– কাঁকরোল হলদে সবুজ হলে সংগ্রহ করতে হয়।
– গাছ রোপণের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কাঁকরোল ফুল দিতে আরম্ভ করে।
– পরাগায়নের ১২-১৫ দিনের মধ্যে কাঁকরোল সংগ্রহের উপযোগী সময়।

See less